একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে তিন গ্রামের মানুষ

banglashangbad

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী তিন গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা দুটি গজারি গাছ দিয়ে নির্মিত সাঁকো। সেরার খালের ওপর কয়েক বছর আগে এলাকাবাসীরা নিজ উদ্যোগেই এই সাঁকোটি নির্মাণ করেন। চারদিকে উন্নয়ন আর উন্নত সভ্যতার ছোঁয়া লাগলেও এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন প্রতিবন্ধকতায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছে তিন গ্রামের বাসিন্দাদের। ফলে তাদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ আর হতাশা।

শ্রীপুর সদরের দুই কিলোমিটার দুরেই গোসিঙ্গা ইউনিয়নের পটকা গ্রাম। সবুজ অরণ্যে ঘেরা আঁকাবাকা পথ বেয়ে একটি পিচ ঢালা পাঁকা সড়ক খালের পাড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে। স্থানীয়রা এটিকে সেরার খাল নামেই ডাকেন। খালের অপর দুই পাশে রয়েছে বাউনী ও সিটপাড়া গ্রাম। তিনটি গ্রাম দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে খালটি। এই খালের দুই পাশে দুটি পিচ ঢালা পাকা সড়ক থাকলেও হেরা পটকা এলাকায় একটি সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়কগুলো। বছরের অধিকাংশ সময় এই খালে পানির প্রবাহ থাকায়, দুটি গজারি গাছ দিয়ে নির্মিত সাঁকোই তিন গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। তবে সাঁকো পারাপারে বয়স্ক, স্কুল-মাদরাসাগামী শিশু-কিশোর ও নারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফলে সেতুর অভাবে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে স্থানীয়দের যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়।

হেরাপটকা গ্রামের আব্দুস সাহিদ আকন্দ জানান, খালে ওপর সেতু না থাকায় তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে শ্রীপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। যখন খালে পানি থাকে না, তখন হেঁটে চলাচল করা যায়। কিন্তু বছরের অধিকাংশ খালে পানি তাকায় তিন গ্রামের লোকজনকে গাছের সাঁকো দিয়েই খাল পার হতে হয়। কিন্তু সাঁকোতে উঠলে শরীর কাঁপে। সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে কর্ণপুর-বাউনি পাকা সড়কও। এখানে একটি পাকা সেতু হলে এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমবে।

হতাশা নিয়ে স্থানীয় ফজলুল হক জানান, যুগ যুগ ধরেই এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে শুনে আসছি। তবে কবে যে হবে, সে কথা কেউ বলে না। দুটি গাছ দিয়ে কোনোমতে তৈরি করা সাঁকোতে উঠলেই পা কাঁপা শুরু হয়।

হেরাপটকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তার জানান, আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তবে বিদ্যালয়ে আসার পথে তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয়। ফলে বর্ষকালে যখন খালে পানি বেশি থাকে তখন সাঁকো পারাপারের ভয়ে বেশিরভাগ শিশু বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। বাবা-মায়েরাও খাল পার হয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। কাছাকাছি আর কোনো বিদ্যালয় না থাকায় সাঁকো পার হবার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বছরের অর্ধেক সময় পড়ালেখা থেকে বিরত থাকে।

গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, উপজেলা সদরের খুব কাছের এই জনপদ সবচেয়ে অবহেলিত। সারা বছর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কাবিখা, টিআর, কাবিটা ও অতি দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান প্রকল্প থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তবে সরকারের এসব প্রকল্পে সেতু নির্মাণের কোনো বরাদ্ধ রাখা হয় না। এরপরও তিনি যখন নির্বাচিত ছিলেন তখন গ্রামবাসীদের সহায়তায় গাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে আপদকালীন ব্যবস্থা করেছিলেন।

একই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য হুমায়ুন কবির জানান, সেরার খালের ওপর সেতুর অভাবে মূলত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে গ্রামগুলো। খালের দুই দিকে পাঁকা সড়ক থাকার পরও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে যানবাহন না চলায় শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের নিয়ে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়াও সেতুর অভাবে গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমছে।

গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাগবে খালের ওপর শিগগিরই একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম প্রধান। তিনি জানান, উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব নিয়েছেন ছয়মাস হলো, এরই মধ্যে স্থানীয়রা দুর্ভোগের বিষয়টি তাকে জানানোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিনি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।