স্ত্রীকে হত্যার পরে লাশ গুম করার তিন মাস পর ঘাতক স্বামী মো. আব্দুল কাদেরকে (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে। খুন করে পালিয়ে গিয়েও পুলিশী তৎপরতায় শেষ রক্ষা হয়নি তার। উদ্ধার হওয়ায় কঙ্কালের সূত্র ধরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
স্ত্রীকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মো. আব্দুল কাদের। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর আলম এই তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, স্থানীয়দের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১ আগস্ট মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে ওই থানার পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন। পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর আলমকে।
দায়িত্ব পেয়ে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে মামলার তদন্ত করেন। এ সময় গোমতির বান্দরছড়ার মৃত আবু খাঁ’র ছেলে মো. আব্দুল কাদের এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহ হয় তার। এরপর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামানের নির্দেশনায় এবং মাটিরাঙ্গা থানার ওসি মো. সামছুদ্দিন ভুইয়ার তত্বাবধানে তাকে গ্রেফতার করে পতেঙ্গা, ইপিজেডসহ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্ত করে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে পানছড়ি বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
মো. শাহানুর আলম জানান, আব্দুল কাদের এই হত্যায় জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে মাইনুর বেগমকে হত্যা করেন তিনি। মাইনুর বেগম তার ৫ম স্ত্রী ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের মোস্তফা সর্দারের মেয়ে মাইনুর বেগম (২৩) চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতেন। এ সময় আব্দুল কাদেরের সঙ্গে তার পরিচয় ও বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকার মাইলের মাথা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা।
বিগত রমজানের ঈদ উপলক্ষে গত ৮ জুন মাইনুর বেগমকে নিয়ে গোমতির বান্দরছড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান আব্দুল কাদের। দুই দিন পরে ১০ জুন বেলা ১১টার দিকে স্ত্রীকে পাহাড় দেখাতে নিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে চোংড়াকাপার গভীর জঙ্গলে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান ঘাতক আব্দুল কাদের। এর দুই মাসের মাথায় মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে এক কঙ্কাল উদ্ধার করে ওই থানার পুলিশ। উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে তারা। তদন্তের প্রায় এক মাস পর গ্রেফতার হন আব্দুল কাদের।
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সামছুদ্দিন ভুইয়া জানান, গ্রেফতারের পর শুক্রবার খাগড়াছড়ির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে আব্দুল কাদেরকে হাজির করা হয়। এ সময় স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানন্দি দেন তিনি।