বিশ্ব থাইরয়েড দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইাট (বিইএস) বুধবার (২৫ মে) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বল রুমে ‘গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড চিকিৎসার গাইডলাইন’ প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটি ‘বৈজ্ঞানিক অধিবেশন’ এবং ‘গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড রোগের চিকিৎসার গাইডলাইন’ প্রকাশের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল অনুষ্ঠানে বলেন, আমেরিকাতে শতকরা ২৫ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ থাকে রিসার্চ এন্ড ডেভোলপমেন্টের জন্য। আপনারাও রিসার্চ এন্ড ডেভোলপমেন্টে সরকারী বরাদ্দের জন্য দাবী করেছেন। আমাদের অনেক অদম্য, যোগ্য রিসার্চার আছেন। সরকার এই নিয়ে কাজ করছে। বেশি করে স্ক্রিনিং, রিসার্চ করতে হবে। আপনারা এদিকে জোর দিন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, থাইরয়েড নিয়ে স্ক্রিনিং, রিসার্চ অনেক কম খরচে করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে এবং থাইরয়েড প্রতিরোধে চিকিৎসকদের আরও তৎপর হতে হবে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ফিরোজ আমিন বলেন, শুধু প্রেগন্যান্সি নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করলে হবে না। সারা বাংলাদেশ নিয়ে ন্যাশনাল গাইডলাইন প্রকাশ করতে হবে। আপনাদের নিয়েই এই কাজ করতে হবে, মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করবে।
বিইএস সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ভ্রুণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা একান্ত জরুরী।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিপূল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশীই জানে না যে, তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সকল ধরণকে এক সাথে হিসেব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% এর কাছাকাছি হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধি জনিত সমস্যা) রোগে ভোগে।
বিএসএমএমইউ এর এই চিকিৎসক বলেন, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ, মহিলাদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি জনিত সমস্যা) থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭% মহিলা ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকেন। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি জনিত সমস্যা হতে পারে এবং তার হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের জন্য ২-৮ হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনয়ন করা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না; অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে তা দ্রুত সমাধান করা না গেলে বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ স্থায়িভাবে ব্যাহত হবে।
তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ একটি গলগন্ড মানুষের দেশ। দৃশ্যমান গলগন্ড রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমে থাকলেও তা কোন ভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে ৮.৫% এর কম নয়। থাইরয়েড ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধির দিকে। বাংলাদেশের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গলগন্ড রোগীদের ৪.৫% এর কাছাকাছি থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিইএস প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. এহতেসামুল হক চৌধুরী, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, বিইএস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট প্রফেসর ডা. মো. হাফিজুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. ফারিয়া আফসানা, প্রফেসর ডা. ফিরোজ আমিন, মেম্বার সেক্রেটারি ডা. মারুফা মুস্তারি, বিএসএমএমইউ এর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এমএ হাসানাত, গাইনোকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. বেগম নাসরিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসকরাও অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিইএস বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষ্যে একটি র্যালি বের করে। র্যালিটি বিএসএমএমইউ এর বটতলা থেকে শুরু করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে ডি ব্লক এর সামনে এসে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকের অবস্থিত। গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতি সাদৃশ এবং এটি ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে প্যাঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকরীতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। এ আয়োডিন শরীরে অতি প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুঃখের বিষয়, সারা পৃথিবীতে এখনও ২,০০০ মিলিয়ন লোক আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন। হরমোনের পরিমাণ অস্বাভাবিক থেকেও গ্রন্থিটি ফুলে যেতে পারে।