রান্নাঘরে গামছা ও লবণ ছিটিয়ে রাখায় লাখ টাকা জরিমানা


চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতারের বিব্রতকর এক কাণ্ডে স্তম্ভিত চট্টগ্রাম। বোরহানির মেয়াদ না থাকা, রান্নাঘরে ভেজা গামছা রাখা ও লবণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার কারণে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট।

নগরের জামালখান এলাকার গ্র্যান্ড সিকদার হোটেলের বর্ধিত অংশ ভাঙতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার। এনেছিলেন বুলডোজারও। কিন্তু মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশ পেয়ে হোটেল ভাঙা থেকে বিরত থাকতে হয় তাকে। কিন্তু ওখানেই থেমে যাননি চসিকের এ ম্যাজিস্ট্রেট। অনেকটা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওই হোটেলকে তাৎক্ষণিক লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধে বাধ্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে শত শত উৎসুক জনতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের সামনে এ কাণ্ড ঘটান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আরেক ম্যাজিস্ট্রেট যুগ্ম জেলা জজ জাহানারা ফেরদৌস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ গ্র্যান্ড সিকদার হোটেলের সামনের অংশ ভাঙতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার। হোটেলের সামনে জড়ো করেন বিশাল বুলডোজার। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের অনুরোধে শনিবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত সময় দিয়ে টেলিফোন করে ম্যাজিস্ট্রেটকে চলে যেতে বলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়রের নির্দেশ পেয়ে গাড়িতে উঠেও যান দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার ও জাহানারা ফেরদৌস। কী বুঝে পরক্ষণে আবার গাড়ি থেকে নেমে যান ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া, আবার চড়াও হন হোটেল কর্তৃপক্ষের ওপর। বলেন, ‘আপনাদের সামনে এখন দুটি অপশন- হয় হোটেল ভাঙব নয় জরিমানা করবো। কোনটা করব আপনারাই ঠিক করুন।’

নিরূপায় মালিকপক্ষ জানায়, ঠিক আছে, জরিমানাই করুন। এরপর হোটেলের ভেতরে ঢুকে আফিয়া আকতার আবিষ্কার করলেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ!

ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযোগ, হোটেলে তৈরি বোরহানিতে মেয়াদের তারিখ উল্লেখ নেই। দেখেন, রান্নাঘরে গামছা, লবণ প্যাকেট থেকে খুলে বাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

মালিকপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানোর চেষ্টা করলে, বোরহানি সকালে বানানো হয়, দিনের বোরহানি দিনেই শেষ হয়। গামছাটা ধুয়ে আগুনের তাপে শুকাতে দেয়া হয়েছে। আর লবণ তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্যাকেট থেকে খুলে বাটিতে রাখা হয়েছে। না, কোনো কথাই শোনবেন না ম্যাজিস্ট্রেট। জানিয়ে দিলেন, ‘সবমিলিয়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা আসে, আপনাদের সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা জরিমানা করলাম।’

ম্যাজিস্ট্রেটের মুখে ১ লাখ টাকা জরিমানার কথা শুনে মালিকের চক্ষু চড়কগাছ! স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এক্ষুণি পরিশোধ করতে।’ তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা জোগাড় করা কষ্টসাধ্য, তাই মালিকপক্ষ চাচ্ছিলেন চেকে টাকাটা পরিশোধ করতে অথবা রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় নিতে।

ম্যাজিস্ট্রেট সাফ জানান, কোথা থেকে দেবেন আমি জানি না, আমি শুধু জানি এ মুহূর্তে নগদে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় মালিকপক্ষকে দুই মাসের কারাদণ্ডের হুমকি দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

শেষ পর্যন্ত এক লাখ টাকা জোগাড় করে তুলে দিলে শান্ত হন আফিয়া আখতার।

চসিকের কাছে অভিযোগ ছিল, ফুটপাতের জায়গা দখল করে আছে জামালখানের সিকদার হোটেল। তাই গত ২২ মে সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার হোটেলের সামনের অংশটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলার আল্টিমেটাম দেন।

এ অবস্থায় পরদিন (২৩ মে) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করে একটি আবেদনসহ প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন সিকদার হোটেল কর্তৃপক্ষ। মেয়র তাতে সম্মত হন এবং যৌথ সার্ভেয়ারের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে আশ্বস্ত করেন। সার্ভে করার আগে হোটেল মালিককে নোটিশ দিয়ে অবহিত করা হবে বলেও জানান মেয়র।

দীর্ঘ তিন মাস অতিবাহিত হলেও যৌথ সার্ভের উদ্যোগ না নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার এসে এই কাণ্ড ঘটান। তার সঙ্গে পুরোটা সময়জুড়ে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম জেলা জজ জাহানারা ফেরদৌস।

এ বিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকের ঘটনা জেনে আগামী শনিবার যৌথ সার্ভের জন্য দিন ধার্য করে ম্যাজিস্ট্রেটদের আমি চলে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু জরিমানার কথা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার বলেন, ‘সিকদার হোটেল কর্তৃপক্ষ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি করছিল, যার কারণে তাদের জরিমানা করা হয়েছে।’