আমেরিকা প্রবাসীর আকুল আবেদন​


প্রিয় বাংলাদেশ, তোমার সন্তানেরা বিশ্বের কোথাও আজ সুখে নেই। নোভেল করোনা ভাইরাস একে একে কেড়ে নিচ্ছে, আমাদের সুখ শান্তি। এই ভাইরাস আজ তোমাকে ও তার ঠিকানা বানাতে চাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একে একে লক ডাউন হচ্ছে গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা। তুমি কি বুঝতে পারছ তার নির্মমতা ? তোমার জন্য খুব চিন্তা হয়, কষ্ট হয়। কারন তোমাতে রয়েছে আমার পরিচিতি, আমার নাড়ী। আমি যেখানেই থাকি না কেন, তোমিই হলে আমার প্রান, আমার অক্সিজেন। তোমার সন্তানদের বলো, প্রয়োজন ছাড়া অন্তত্ এই কয়েকটা দিন যেন ঘর থেকে বাহির না হয়। বাহিরে মৃত্যুর হাতছানি।রাক্ষসের মত হা করে বসে আছে। তারা কি দেখতে পাচ্ছেনা, বিশ্বের ক্ষমতাসীনরা অসহায় এর মত আকাশের দিকে চেয়ে আছে, যদি কোন সাহায্য উপর থেকে আসে। তারা কি দেখতে পাচ্ছেনা, স্পেন, ইতালী, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের গন কবরে, জাতি ধর্ম বর্নের সারি সারি লাইন। তারা কি দেখতে পাচ্ছেনা, দশ বারো বৎসরের সন্তানদের নিয়ে অসুস্থ মা, দিনের পর দিন ঘরে নিয়ে, পাহারা দিচ্ছে ভাইরাসের ছোবলে চলে যাওয়া পিতার নিতর দেহ। তাহারা কি দেখতে পাচ্ছেনা, আট দিন ঘরে অসুস্থ থেকে, বাবা মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে।যে শিশুরা এক দিনও মা বাবা ছাড়া রাতে ঘুমায়নি, মমতাময়ী মা বাচ্চাদের মুখে তুলে খাওয়াতেন সেই মা হাসপাতালে যাওয়ার সময়, শুধু হাত নেড়ে সন্তানদের থেকে বিদায় নিয়েছেন, বাবা হাসপাতালে মা কে টেস্ট এর জন্য নিয়ে গিয়েছেন, টেস্ট এ মা-র সাথে বাবা ও আটকা পড়েছেন। দুজনই মরনব্যধিতে আক্রান্ত। এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর তার পর বিকেল বাবা মা-র কোন খবর নেই, তারপর রাতে বাবার ফোন থেকে কল আসল, ১২ বৎসরের সন্তান ফোন কল ধরতেই, বাবার কন্ঠ শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল্ “ বাবা তোমরা কোথায়?বাবা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, মা তুমি কান্না করনা, তোমার ছোট ভাইয়ের দিকে খেয়াল রাখো, রাতে দুজনে একসাথে ঘুমাইও। তোমার আম্মাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে ৮তলায় আছেন আর আমাকে রেখেছে ৭তলায়। সময় মত নামাজ পড় আর দোয়া করো।” তাহারা কি দেখতে পাচ্ছেনা, হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দিতে,ডাক্তার নার্স সহ সংশ্লিস্স্টরা ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর দিকে। তাহারা কি দেখতে পাচ্ছেন না, এক মহান ডাক্তার ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে দিতে, নিজের অজান্তেই তার ভিতরে বাসা বেঁধেছে, মরনব্যধি নোবেল করোনা।যখন তিনি দেখলেন, তার সময় শেষ হয়ে আসছে, তখন বাড়ির সামনে এসে, গেইটে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন, আর অবুঝ সন্তানেরা এবং সন্তান সম্ভবনা স্ত্রী জানালা দিয়ে তাকিয়ে শেষ বারের মত দেখে নিল, তাদের আপনজনকে। ও আমার প্রানের জন্মভূমি, তুমি তোমার সন্তানদের বলো, বড়ই নিষ্টুর, নির্মম এই ভাইরাসের তান্ডবতা। তাহারা যেন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য, এই দূর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন ঘরে থাকে, নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। পরিশেষে বলব্, তুমি ভালো থেকো, নিরাপদে থেকো। তুমি ভালো থাকলে, বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তোমার সন্তানের, ভালো থাকবে। মোহাম্মদ জাহেদ মাহমুদ আজিজ(সুমন) সভাপতি মিশিগান স্টেট যুবলীগ, যুক্তরাষ্ট্র । ট্রাষ্টী বোর্ড সদস্য ও সাবেক সাধারন সম্পাদক বিয়ানীবাজার সমিতি অব মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *