কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে বিশ্বজুড়ে নানা চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
প্লাজমা প্রতিস্থাপন, কিছু অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের সাহায্য নেয়া, আবার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে আঁকড়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এ তালিকায় যুক্ত হলো নয়া স্টেমসেল থেরাপি। স্টেমসেল থেরাপি প্রয়োগ করে মৃত্যুপথযাত্রী সাতজন কোভিড আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন ইসরাইলের। একজন আমেরিকার বাসিন্দা। তাই নতুন এই থেরাপিতে এখন আশা দেখছেন চিকিৎসকরা।
স্টেমসেল থেরাপি কী?
সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও ভায়রোলজিস্ট অমিতাভ নন্দীর জানান, ‘সন্তান জন্মানোর পর মায়ের শরীর থেকে যে প্ল্যাসেন্টা বেরিয়ে আসে, তার মধ্যে রয়েছে এসব স্টেমসেল। বিজ্ঞানীরা এখান থেকে কোষ নিয়ে তাকে পরিণত করেন স্মার্ট কোষে।
এমনভাবে প্রোগ্রামিং করা হয় যে, সেই কোষ যে শরীরে যাবে, সেই শরীরের প্রয়োজন বুঝে, ঠিক তার মাপমতো ওষুধ তথা প্রোটিন নিঃসরণ করবে। স্টেমসেল থেরাপি মূলত এটিই।’
কীভাবে কাজ করে?
অমিতাভ নন্দী আরও জানান, ভাইরাসের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে ধ্বংস করার চেষ্টায় তা কখনও কখনও অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর পরিমাণে সাইটোকাইন রাসায়নিকের প্রবাহ শুরু হয়, যাকে বলে সাইটোকাইন স্টর্ম।
এদের মধ্যে কিছু রাসায়নিক প্রদাহ ঘটিয়ে ফুসফুসের প্রচুর ক্ষতি করে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে অকেজো হতে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্যঙ্গ। দেখা দেয় মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর। রোগী মারা যান।
প্রোগ্রামিং করে তৈরি করা কোষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করালে তারা শরীরের ভেতরে প্রোটিন তথা ওষুধ তৈরি করে। ওষুধ বলতে দুই ধরনের প্রোটিন। একটি প্রদাহ কমায়। আরেকটি অতিসক্রিয় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। একে বলে ‘ইমিউন মডিউলেশন’।
ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ ফের নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রদাহের প্রকোপ কমাতে শুরু করে। অকেজো হতে থাকা প্রত্যঙ্গরা ফিরে পায় তাদের কার্যক্ষমতা।
তবে এই স্টেমসেল পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটুকু সারা হয়েছে। তাতে সাড়া মিলেছে ভালো। আরও অনেক পর্যায় এর বাকি। সব পরীক্ষা শেষ হলে তবেই বোঝা যাবে কোভিডের বিরুদ্ধে এই স্টেমসেল থেরাপি কতটা কার্যকরী।