ট্রাম্পের হুমকিতে পিছু হটলেন জুকারবার্গ


রাজনৈতিক চাপের মুখে বছর দুয়েক আগে গুজব প্রতিরোধে আরও কিছু করা উচিত বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। অথচ বৃহস্পতিবার ফক্সনিউজকে তিনি বলেন, অনলাইনে বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে কোম্পানির দূরত্ব বজায় রাখা কিংবা পদক্ষেপ নেয়া থেকে সরে আসা উচিত।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, তার কোম্পানিকে হোয়াইট হাউসের অনগ্রহভাজন করতেই জুকারবার্গ এ মন্তব্য করে থাকতে পারেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিকমাধ্যম টুইটারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পর তার এমন মন্তব্য এসেছে।

ট্রাম্পের কিছু মন্তব্যের ফ্যাক্টচেকিং কিংবা ‘তথ্যের সত্যতা যাচাই’ করে দেখার চেষ্টা শুরু করেছিল টুইটার। এরপর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সামাজিকমাধ্যমগুলোকে দেয়া বেশকিছু আইনি সুরক্ষা প্রত্যাহারে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।

ফক্স নিউজকে জুকারবার্গ বলেন, লোকজন অনলাইনে যা বলে, সেসব কিছুর সত্যতার সালিশকারী হতে যাবে না ফেসবুক। আমি জোরালোভাবে এমনটা বিশ্বাস করি। ব্যক্তিগত মালিকানার কোম্পানির সেটা হওয়া উচিত হবে না। বিশেষ করে এই প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলোর তেমন কোনো অবস্থান নেয়া উচিত হবে না।

এদিকে মিথ্যা বক্তব্যের তথ্য যাচাই করতে যাওয়া টুইটারের ওপর ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করায় জুকারবার্গের ওপর ক্ষেপেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি।

তিনি বলেন, জুকারবার্গ তার প্ল্যাটফর্মের গুজব নিয়ন্ত্রণে অস্বীকার করে ট্রাম্পকেই সহায়তা করছেন। আর এটা এমন এক সময় করা হচ্ছে, যখন প্রেসিডেন্ট টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিকমাধ্যমের ওপর চড়াও হয়েছেন।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে ন্যানসি পেলোসি বলেন, তারা নিয়ন্ত্রণ চান না। কাজেই তারা হোয়াইট হাউসকে সহায়কা করছেন। আপনারা শুনেছেন, আজ জুকারবার্গ কী বলেছেন। তারা কেবল ট্রাম্পকে সহায়তা করছেন।

সিএনবিসির স্কোয়াক বক্সকে জুকারবার্গ বলেন, কল্পিত কাহিনী থেকে সত্য বের করে আনা ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের দায়িত্ব না। আমাদের কার্যক্রম কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে মনে হয় আমি পরিষ্কার। আমি মনে করি না ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম, সাধারণভাবে, সত্যের নিয়ন্তা হওয়া উচিত। কোনটা সত্য আর কোনটা সত্য না, তা নির্ধারণ করতে যাওয়া বিপজ্জনক হবে।

এক সাক্ষাৎকারে অ্যান্ড্রু রোস সরকিনকে তিনি বলেন, আমি মনে করি রাজনৈতিক বক্তব্য হচ্ছে গণতন্ত্রের স্পর্শকাতর অংশগুলোর মধ্যে একটি।

এদিকে ট্রাম্পের আদেশের পর ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিকমাধ্যম তাদের প্ল্যাটফর্মে যেভাবে তদারকি করে, তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ করে দেবে।

স্বাক্ষরের সময় সামাজিকমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো ‘অবারিত ক্ষমতা’ ভোগ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ আইনি বাধার মুখে পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো এখন যেসব সুরক্ষা পাচ্ছে, তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেস কিংবা আদালতের অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা উচিত।

টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরুদ্ধে লাগাতার পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ করে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবারই স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়া হবে হুমকি দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, এ প্ল্যাটফর্মগুলো ধারাবাহিকভাবে রক্ষণশীল মতের উপর কাঁচি চালিয়ে আসছিল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *