বাংলা সংবাদ ডেস্কঃমুসলিম জাতির একটি সোনালি ইতিহাস আছে। এ ইতিহাস শুধু তারা ভাগ্যের সহায়তায় নির্মাণ করেনি; বরং এর পেছনে আছে তাদের বহু ত্যাগ ও বিসর্জন, আছে নির্মোহ সাদাসিধে সত্যবাদী জীবনের শক্ত ভিত, আছে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সুযোগ্য নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইসলাম যে সময় পৃথিবীতে আগমন করে, তখন একদিকে রাজত্ব করছিল রোমান শাসকরা, অন্যদিকে রাজত্ব করছিল পারসিকরা। উভয় সাম্রাজ্যের ছিল নিজস্ব সভ্যতা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও মূল্যবোধ। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতেও তারা ছিল অনন্য। প্রাশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও শিল্প-সাহিত্যেও তাদের অবস্থান ছিল ঈর্ষণীয়। পৃথিবীর সব শক্তি তাদের সমীহ করত। এই দুই শক্তির মাঝে আরব ছিল একেবারেই মূর্খ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ বা সম্পর্ক ছিল না। তবে একটি নতুন দ্বিন ও ধর্মের প্রচার-প্রসারে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল তা তাদের মধ্যে ছিল। তারা ইসলামের বৈপ্লবিক আহ্বানে সাড়া দিল এবং ইসলামের ছায়ায় তারা উন্নয়নের শীর্ষবিন্দুতে আরোহণ করল। মুসলিম জাতির সামনে পৃথিবীর বিস্ময় রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্য আত্মসমর্পণে বাধ্য হলো।
ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের জন্য আরবরা জ্ঞানচর্চা করেছিল। আর মাত্র দেড় শ থেকে দুই শ বছরের মধ্যে আরব ভূখণ্ড জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছিল। বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনে মুসলিমরা ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে সমগ্র পৃথিবী তাদের অনুগামী ও অনুসারীতে পরিণত হয়। সাত শ বছর পর্যন্ত মুসলিম জাতি বিরতিহীনভাবে জ্ঞানজগতে বিচরণ করেছে এবং পাঁচ শ বছর পর্যন্ত তার সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা নিজেদের এমন স্তরে উন্নীত করেছিল যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু শাখা এখনো মুসলিম জাতির ঋণ স্বীকারে বাধ্য হয়। অন্যদিকে মুসলিম জাতির পতনের সূচনা হয়েছিল যখন তারা জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দিয়েছিল। তারা ভেবে বসেছিল, যে সম্মান ও মর্যাদা তারা অর্জন করেছে তা কখনো হারিয়ে যাবে না। অথচ তখন অন্য জাতিগুলো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
মানবজাতিকে এগিয়ে নিতেই ইসলামের আগমন। যত দিন পৃথিবীর নেতৃত্ব, শক্তি, নিয়ন্ত্রণ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান মুসলমানের হাতে ছিল, তত দিন ইসলাম মানবসভ্যতা অভূতপূর্ব সেবা ও পূর্ণতা দান করেছে। মুসলিম জাতি এমন বহু অঞ্চলে পৌঁছেছে, যেখানে মানুষ পশুর মতো জীবনযাপন করত। ইসলাম তাদের সভ্যতা ও মনুষ্যত্ব দিয়েছে। তাদের মানুষ হতে শিখিয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ! মুসলিম জাতির ভেতর জাগরণ আসছে। তারা বেঁচে থাকতে, টিকে থাকতে এবং হারানো গৌরব ফিরে পেতে সজাগ-সচেতন হচ্ছে, চেষ্টা ও সংগ্রাম করছে। যারা সঠিক রাস্তায় হাঁটে, তারা একসময় গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ইনশাআল্লাহ! মুসলিম জাতি একসময় তাদের হারানো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরে পাবে। শত অপপ্রচারের ফাঁকে ফাঁকে মুসলিম কীর্তি ও সাফল্যের কিছু সংবাদ এমন প্রকাশিত হয়, যা দেখে হৃদয় প্রশান্ত হয়। হ্যাঁ, চূড়ান্ত সাফল্য কবে অর্জিত হবে সেটা শুধু মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করলে অসম্ভব নয়, অতীতের সুদিন আরো সুখময় হয়ে ফিরে আসবে। যদিও পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো মুসলিম জাগরণকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে জাতিকে পিছিয়ে রাখতে। মুসলিম জাতি এখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে। তবে এই দূরত্ব অতিক্রম করা কঠিন কিছু নয়। কেননা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে মুসলিম জাতির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়, তাদের ভেতর যোগ্যতা সৃষ্টি করে। শর্ত হলো, মুসলিম জাতির নতুন প্রজন্মকে এমন শিক্ষা-দীক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা তাদের নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং তার সদ্ব্যবহার করতে পারে।
মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা আন্দোলন প্রয়োজন। এ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হবে ইসলামী শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়। যেন নতুন প্রজন্ম তাদের মুসলিম পরিচয়ও বহন করে এবং যুগের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও সক্ষম হয়। ছেলেশিশুর মতো মেয়েশিশুদের শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা আন্দোলন গতিশীল করতে গণমাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। গণমাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রচার করতে হবে। সমকালীন সংকটগুলোর ইসলামী সমাধান এবং ইসলামী কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরতে হবে। ইসলাম ও মুসলমানের ওপর উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে হবে।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আল্লাহর আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ। মানুষ যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে পারে, তবে আল্লাহ তাদের পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। আর প্রয়োজন মানুষের কল্যাণে কাজ করা। যারা অন্যের কল্যাণে কাজ করে আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আল্লাহ কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়াসী হয়। তাই মুসলিম জাতির ভাগ্য বদলের আগ পর্যন্ত ধৈর্য, নিষ্ঠা, প্রজ্ঞা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ সব মুসলমানকে কবুল করুন। আমিন।
তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর।