পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় থাপ্পড় দিয়ে এক শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ইমন হোসেন (১৪) নামে ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার ছোট বিশাকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইমন ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র ও বিশাকোল গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। বর্তমানে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে ইমন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এবং সোমবার ঘটনাটি বিভিন্ন মহলে জানা জানি হয়।
হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ইমন হোসেন জানায়, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের রুটিন মোতাবেক শিক্ষক না থাকায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ নবম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাসে হাজির হন। তার আগ পর্যন্ত শিক্ষক না থাকায় শ্রেণিকক্ষে চেঁচামেচি করেছিল শিক্ষার্থীরা।
এ সময় প্রথম সারিতে বসা ইমন দাঁড়িয়ে সবাইকে চেঁচামেচি থামাতে বলে। এতে প্রধান শিক্ষক খুশি না হয়ে উল্টো ক্ষুব্ধ হন। ইমনের কাছে গিয়ে মাথার চুল ধরে কানের ওপর বেশ কয়েকটি থাপ্পড় দেন শিক্ষক। সেই সঙ্গে পিঠের ওপর তিন-চারটি ঘুষি মারেন। ঘুষি মারতে মারতে শিক্ষক বলেন, ‘তুই বড় মাস্তান হইছিস।’
প্রধান শিক্ষকের থাপ্পড়ের পরপরই ইমনের ডান কান দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এ সময় ইমন বাইরে গিয়ে কানের রক্ত ধুয়ে মাথায় পানি দেয়। বাড়িতে যাওয়ার পর ওই দিন বিকেলে তার কান ব্যথা শুরু হয়।
এ অবস্থায় স্থানীয় ডাক্তারের কাছে প্রাথামিক চিকিৎসা নেয় ইমন। কিন্তু তার কানের ব্যথা বাড়তে থাকলে শুক্রবারে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকে দেখান। চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, ইমনের কানের পর্দা ফেটে গেছে। কানের ব্যথা না কমায় শনিবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ইমনের বাবা আব্দুল মালেক বলেন, একজন শিক্ষক এভাবে আমার ছেলেকে কানের ওপর মেরে কানটার ক্ষতি করবে এটা কখনো আমি আশা করিনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিশাকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, শ্রেণিকক্ষে বেয়াদবি করায় তাকে একটা থাপ্পড় মারা হয়েছে। কিন্তু ঘাড় ঘোরাতেই হয়তো তার কানে লেগেছে। আমি তাকে হাসপাতালে দেখতে গিছি। বর্তমানে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর রাখছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল আলম বলেন, ছাত্রকে কানের ওপর থাপ্পড় মারার অভিযোগ পেয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার্থীর যাথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে প্রধান শিক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগটি এখনো আমার হাতে আসেনি। তবে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জেনেছি। আহত শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত বা আঘাত করা যাবে না। তদন্তে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।